হজ্জের নিয়মাবলী

হজ্জের নিয়মাবলী নিচে দেওয়া হলো

তালবিয়া :— লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকালাক।

হজ্জের নিয়ত:— আল্লাহুম্মা ইন্নী উরিদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু লী ওয়াতা কাব্বালহু মিন্নী।

রুকনে ইয়ামানী হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত আসতে দোয়া: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।

তাওয়াফ শুরু করার দোয়া:— বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসুলিল্লাহ।

জমজম পানি পান করার দোয়া:— আল্লাহুম্মা ইন্নী আছ আলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়া রিজকান ওয়াছিআ, ওয়া শিফাআম মিন কুল্লি দা ইন।

সায়ীর দোয়া:— ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআ'ইরিল্লাহ ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ি'তামারা ফালা জুনাহা আলাইহে আই ইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা, ওয়া মান তাতাও ওয়া খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলীম।

সবুজ বাতিদ্বয়ের মাঝে দোয়া:— রাব্বিগ ফিরলী ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আয়াজুল আকরাম।

আরাফার ময়দানে দোয়া:— লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

জামারাতে পাথর মারার দোয়া:—  বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, রাগমাল লিশ শয়তান ওয়া রিদাল লির রাহমান।

মদীনা শরীফে রওজা পাকে সালাম:— আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলল্লাহ, আস সালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ আস সালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকরিন সিদ্দিক, যাজাকাল্লাহু আন্না ওয়া আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন আজমাঈন আস সালামু আলাইকা ইয়া ওমারাবনিল খাত্তাব, জাযাকাল্লাহু আন্না ওয়া আন উম্মাতি মুহাম্মদিন আজমাঈন।

সম্মানিত আল্লাহর মেহমানগণ,

আপনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এই কারনে, শত—সমস্যা ও ব্যস্ততার মাঝেও আল্লাহ পাক পবিত্র হজ্জ পালন করার জন্য আপনাকে মনোনীত করেছেন। আপনার জীবনের বহু আকাঙ্খিত এবং প্রতীক্ষিত পবিত্র হজ্জ কামিয়াব করতে হলে নিচের কথাগুলো পড়তে হবে, বুঝতে হবে এবং মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

* আপনি আল্লাহর মেহমান। আপনার লক্ষ্য একটি মাবরুর হজ্জ হাসিল করা। তাই এখন থেকে আপনার চিন্তা হবে আল্লাহকে রাজি—খুশি করা।

* হজ্জের সফর একটি কষ্টের সফর। কষ্ট এবং ধৈর্য ছাড়া এ আমল হাসিল সম্ভব নয়। মহানবী (সঃ) এর হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন," হে আল্লাহ আপনি আমার হজ্জকে কবুল করে নিন এবং সহজ করে দিন।" অতএব তাঁর উম্মত হিসেবে দৈহিক কষ্ট ও আর্থিক ত্যাগের বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে।

* হোটেলে পুরুষ এবং মহিলা আলাদা আলাদা রুমে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। হোটেলসমূহের রুম সেটাপ স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং রুমমেট সেটাপের পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক, এইক্ষেত্রে সকলের উদারতা কাম্য।

* রুচি সম্মত দেশী খাবার ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে। প্রত্যেকের রুমের খাবার পানির ব্যবস্থা হাজি সাহেবের নিজ দায়িত্বে থাকবে।

* মিনাতে প্যাকেট পদ্ধতিতে খাবার সরবরাহ করা হবে। আরাফার দিনে দুপুরে মুয়াল্লিম খাবার সরবরাহ করে থাকে। মোজদালেফায় রাতে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব নয়। মিনাতে থাকাকালীন সময়ে মিনাতেই খাবার দেওয়া হবে। এ সময়ে কেউ হোটেলে থাকলে, খাবার তার নিজ দায়িত্বে থাকবে।

* মিনা এবং আরাফার তাবুতে পুরুষ এবং মহিলা আলাদা তাবুতে থাকবেন।

* আরাফা থেকে মোজদালেফায় ফেরার পথে মুয়াল্লিমের বাস সংগ্রহ করতে অনেক সময় জটিলতার সৃষ্টি হয় বা প্রচন্ড ভীড় হয়, এ ক্ষেত্রে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। মোজদালিফা থেকে মিনার তাবু পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হবে। মিনা থেকে মক্কা, মক্কা থেকে মিনা হাজী সাহেব পায়ে হেঁটে অথবা নিজ খরচায় ব্যবস্থা করবেন।

* আজিজিয়ার হোটেল থেকে প্রথমবার মক্কা শরীফে ওমরার জন্য যাতায়াতের খরচ কাফেলা বহন করবে, পরবর্তী সকল যাতায়াত (ফরজ তাওয়াফসহ) হাজীসাহেবগন নিজ খরচায় ব্যবস্থা করবেন।

* মিনা, আরাফা, মোজদালেফায় বাথরুম ব্যবহার কষ্টকর, সেই ক্ষেত্রে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

* সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী মিনার তাবুতে ১ হাত চওড়া ও ৪ হাত লম্বা

পরিমান জায়গা বরাদ্ধ থাকবে এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

* আরাফার তাবুতে সাধারণ বিছানা থাকে। মোজদালেফায় কোন তাবু বা বিছানা থাকেনা, খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়, সেই ক্ষেত্রে একটি চাদর, ছাতার ব্যবস্থা রাখলে ভাল হয়।

* হজ্জের ৫ দিন সৌদি সরকার সহ কারো কোন নিয়ন্ত্রনে থাকেনা। লক্ষ লক্ষ হাজী সাহেবদের একত্রে মুভমেন্টে কারো পক্ষে কোন সার্ভিস যথাযথ প্রদান করা সম্ভব না। হারিয়ে যাওয়া, খাবার না পাওয়া, বাস না পাওয়া, তাবু না পাওয়া— হজ্জের সময় এ পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন হতে হয়। আল্লাহর খাস দয়াই আমাদের পাথেয়। এ পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

* বিমানে যাত্রা বিলম্ব বা যাত্রা বাতিল, ঢাকা ও জেদ্দা ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস, বিমানের আভ্যন্তরীণ সার্ভিস, মালের ওভার ওয়েট, উভয় বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে এয়ারলাইন্স এবং সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

* বডিং পাস, পাসপোর্ট বা অন্য কোন কিছু হাজি সাহেব থেকে হারিয়ে গেলে কাফেলা দায়ী থাকবে না। তবে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে।

* মক্কা থেকে মদিনা ও মদিনা থেকে জেদ্দা সফর কালীন সময়ের খাবার হাজী সাহেব নিজ খরচায় ব্যবস্থা করবেন।

* বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যাওয়া ও আসার সময় অন্য কারো মালামাল বহন না করার অনুরোধ করছি, একই আইটেমের অনেক মাল অথবা পান, সুপারি, জদ্দা, গুল, বহন নিষিদ্ধ কোন মালামাল, প্রেসক্রিপসন ব্যতীত অতিরিক্ত ঔষধ বহন না করার অনুরোধ করছি।

* মক্কা ও মদিনা শরিফে অধিকাংশ হাজী সাহেবগন ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে হয়। মসজিদের পান করার জন্য জমজম পানির জার থাকে, গরমের কারনে ঠান্ডা পানি খেতে মনে চাইবে, আপনি ঠান্ডা পানি না খেয়ে নরমাল পানির জার থেকে পানি পান করার চেষ্টা করবেন।

আল্লাহ আপনাদের উত্তম হজ্জ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

হজ্জের শাব্দিক অর্থ: কোনো মহৎ কাজের ইচ্ছা করা।

হজ্জের পারিভাষিক অর্থ: হজ্জের নিয়তসহ ইহরাম ধারণপূর্বক ৯ যিলহজ নির্দিষ্ট সময়ে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা, কা'বা ঘরের তাওয়াফ, জামারাতে রামী ও সাফা—মারওয়ার মাঝে সায়ী ইত্যাদি আমল করা।

হজ্জের প্রকারভেদ: (৩ প্রকার)

১. ইফরাদ: মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধুমাত্র হজ্জের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ঐ ইহরামেই হজ্জ সম্পাদন করা।

২. তামাত্তু: মীকাত অতিক্রমের পূর্বে শুধুমাত্র উমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ঐ ইহরামে উমরাহ পালন করে হালাল হয়ে যাওয়া। অতঃপর হজ্জের সময় হজ্জের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ঐ ইহরামে হজ্জ সম্পাদন করা।

৩. কিরান: মীকাত অতিক্রমের পূর্বে একইসাথে উমরাহ ও হজ্জের নিয়তে ইহরাম ধারণ করে ঐ ইহরামে একসাথে হজ্জ ও উমরাহ পালন করা।

** মীকাত: যে স্থান অতিক্রমের পূর্বে মক্কা মুকাররামা গমনকারীদের জন্য ইহরাম ধারণ করা ওয়াজিব। নৌপথে বাংলাদেশীদের মীকাত ইয়ালামলাম। বিমানপথে কারনুল মানাযিল ও যাতু ইরক বরাবর হয়ে মীকাতে প্রবেশ করে বলে প্রতীয়মান হয়। সাধারণত জেদ্দায় বিমান অবতরণের ২০/২৫ পূর্বে মীকাত অতিক্রম করে, তাই এর পূর্বেই ইহরাম ধারণ করে নিতে হবে।

সাধারণত আমরা তামাত্তু হজ্জ আদায় করে থাকি, তাই তামাতু হজ্জের নিয়ম অনুযায়ীপ্রথমে উমরাহ অতঃপর হজ্জের বিধানাবলী নিয়ে আলোচনা করা হবে।

১. ক্ষৌর কার্য করা: সুন্নত নিয়ম এই যে প্রথমে নখ ও মোচ কেটে নিবেন। নাভী ও বগলের নিচের লোম সাফ করে নিবেন। ইফরাদ ও ক্বেরানকারীগণ মাথার চুল ছোট করে নিলে ভাল হয়।

২. গোসল: গোসল বা ওজু করে নিন, তবে গোছল করা উত্তম।

৩. সুগন্ধি ব্যবহার: গোছলের পর শরীরে ভাল ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করুন।

৪. ইহরামের কাপড়:

পুরুষ: সেলাই বিহীন ২ পিছ কাপড় ১ টি লুঙ্গি যা আড়াই থেকে তিন গজ এবং ১ টি চাদর যা ৩ গজ বিশিষ্ট হবে।

মহিলা: মহিলাগণ সেলাই কৃত যে কোন রংয়ের স্বাভাবিক ও শালীন পোষাক পরিধানকরবেন।

বি. দ্র. স্বাভাবিক সময়ে ইহরামের কাপড় সুতি হলে ভাল হয়। মোটা তাওয়াল ব্যবহার করলে গরমে কষ্ট হয়। তবে ঠান্ডা অনুভূত হলে ইহরামের কাপড়ের নিচে শাল বা চাদর ব্যবহার করলে কোন সমস্যা নেই।

৫. ইহরামের জুতা:

পুরুষ: দুই ফিতাওয়ালা সেন্ডেল যাতে পায়ের উপরের অংশের ৩/২ অংশ খোলা থাকে।

মহিলা: মহিলাগণ হাটতে আরাম হয় এমন যে কোন জুতা পরতে পারেন।

ইহরামের নামাজ: মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে ইহরামের দুই রাকাত নামাজ পড়া সুন্নাত। প্রথম রাকাতে সূরা ক্বাফিরুন এবং ২য় রাকাতে সূরা ইখলাস সূরা পড়া উত্তম। তবে অন্য যে কোন সূরা দিয়েও পড়া যায়।

বি. দ্র. মনে রাখবেন, ইহরামের কাপড় পরলেই কিন্তু মুহরিম হয় না, বরং নিয়্যাত ও তালবিয়ার মাধ্যমে মুক্রিম হতে হয়। সুতরাং যেহেতু আপনি এখনো মুহরিম হননি তাই ইহরামের নামাজের সময় মাথায় টুপি অথবা ইহরামের কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে নিন।

নিয়ত ও তালবিয়া: মুহরিম হওয়ার জন্য নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ করা ফরজ। এখন আপনি মাথার টুপি বা কাপড় খুলে উমরার নিয়ত করে নিন— "হে আল্লাহ, আমি উমরাহ পালনের নিয়ত করছি। আপনি তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।" এবং তিনবার তালবিয়া পাঠ করুন।

এখন আপনি মুহরিম হয়ে গেলেন। কয়েকবার দরুদ শরীফ পড়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে হজ্জ সহজ করে দেয়া ও কবুলের জন্য কান্নাকাটি করে দোয়া করে নিন।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ:

১. শরীরের লোম বা চুল কর্তন করা বা উপড়ানো।

২. নখ কাটা বা এক নখ দিয়ে অন্য নখ উপড়ানো।

৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা অথবা সুগন্ধিযুক্ত সাবান বা সুগন্ধিযুক্ত ভ্যাসলিন, সুগন্ধি যুক্ত টিস্যু ব্যবহার করা, তবে সুগন্ধিবিহীন হলে প্রয়োজনে সাবান বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করা যাবে। (প্লেনে আপনাকে ব্যবহারের জন্য ফেসিয়াল টিস্যু দিবে, সুগন্ধি থাকার কারণে তা ব্যবহার করবেন না।)

৪. স্ত্রী সহবাস করা, সহবাসমূলক কথা, স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা।

৫. ঝগড়া বিবাদ করা, অপরকে কষ্ট দেয়া, গীবত করা, গালী দেয়া, মন্দ কথা—বার্তা বলা বা হেয় প্রতিপন্ন করা (এগুলো সবসময়ই নিষিদ্ধ)।

৬. পুরুষদের জন্য টুপি, জামা, পায়জামা, আন্ডারওয়্যার, মৌজা এবং পায়ের উপরের অংশ ঢেকে যায় এমন জুতা ব্যবহার করা।

৭. মহিলাগণ হাত ও চেহারা ছাড়া সমস্ত শরীর আবৃত রাখবেন। চেহারার উপরের কাপড় যেন চেহারার সাথে না লেগে থাকে খেয়াল রাখবেন।

বি. দ্র. সেলাইবিহীন কাপড় পরিধানের অর্থ— যে কাপড় সেলাই করলে শরীরের কোন অংশের আকৃতি দেয়। সুতরাং কাপড়ের পার্শের সেলাই, চাদরের পার্শের ডিজাইন, ফোম বা চামড়ার সেন্ডেলের সেলাই, ব্যাগের সেলাই, কোমরের বেল্টের সেলাইতে কোন সমস্যা নেই। সেলাই বিহীন লুঙ্গি পরিধানের ক্ষেত্রে লুঙ্গিকে গিট দিয়ে পরিধানে বা বেল্ট দিয়ে পরিধানে কোন সমস্যা নেই।

মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী—

'আর মানুষের উচিৎ এ প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করা' আল—কোরআন।

আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ নিঃসন্দেহে মহান এবাদত। পবিত্র হজ্জ ও ওমরার মূল রুকন হচ্ছে ক্বাবা শরীফের তাওয়াফ। হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীগন তাওয়াফ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন আমরা অনারবী, আরবী দুয়া মুখস্ত নেই, কিভাবে তাওয়াফ করবো বাজারে যে সকল কিতাবাদি রয়েছে অনেক বড় বড় দোয়া, তখন তাওয়াফে গিয়ে ঐ বই দেখে দেখে অনেকে দোয়া পড়েন অধিকাংশ জন কি পড়েন তাও বলতে পাড়েন না, অথচ তাওয়াফ অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। মহান আল্লাহর দরবারে চাইতে হলে অত্যন্ত বিনয়তার সাথে বুঝে শুনে দোয়া পাঠ করতে হয়।

মনে রাখবেন ৭ বার প্রদক্ষিন করা হচ্ছে ফরজ। কেউ যদি কোন দোয়া না জানে শুধু প্রদক্ষিন করে তাও তাওয়াফ হয়ে যাবে। এটা নামাজের সিজদার ন্যায়, সিজদাহ ফরজ আর সিজদার তাছবীহ সুন্নাত।

হাজী সাহেব/ সাহেবাগণের সুবিধার্থে সহজে তাওয়াফ ও সায়ীর পদ্ধতি নিম্নে বর্নিত হলোঃ

১. নিয়ত:  হাজরে আসওয়াদের বরাবর আসার পূর্বেই হজ্জের তাওয়াফ/ ওমরার তাওয়াফ/নফল তাওয়াফ এর নিয়ত করুন' হে আল্লাহ! আমি আপনার ঘরে সাত চক্কর ফরজ/নফল তাওয়াফের ইচ্ছা করছি, আপনি ইহা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

তাওয়াফ শুরুঃ  হাজরে আসওয়াদ বরাবর তথা সবুজ বাতি বরাবর দাড়িয়ে দুহাত নামাজের ন্যায় উঠিয়ে তাকবীর (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার) বলে হাত উঠাবেন, এর পর কালো পাথরের দিকে ইশারা করে হাতে চুমু দিন ও তাওয়াফ শুরুকরুন।

২. হামদ ও সানাঃ  তাওয়াফের শুরুতে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা পাঠ

ক, নামাজে পঠিত ছানাও পরতে পারেন।

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারাকাছমুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা'

খ. এ তাছবীহ্ও পাঠ করা যায় সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আজিম।

গ. কালেমায়ে শাহাদাত পড়ুন। 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাললাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

ঘ. মাকামে ইব্রাহিমে পড়ুনঃ (দুরুদে ইব্রাহীম পড়ুন) আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

৩. হাতিমের দিকে যেতে পড়ুনঃ

ক. ইস্তিগফার পড়ুন ৩ বার (ভীড় হলে বেশী পড়ুন) আসতাগফিরুল্লাহা রাব্বী মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি লাহাওলা ওলা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম।

খ. সুরা ফাতেহা পাঠ করন (উত্তম দোয়া)।

গ. রাব্বানা জলামনা আনফুছানা ওয়া ইললাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান নামিনাল খাছিরীন। কয়েকবার পড়ুন

ঘ. দুয়ায়ে মাসুরা পড়তে পারেন মুখস্ত থাকলে "আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসী জুলমান কাসিরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম"।

ঙ. দোয়ায়ে কুনুত পাঠ করতে পারেন।"আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু'মিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাও ওয়া নাতরুকু মাইয়্যাফজুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যা কানা'বুদু ওয়ালাকা নুসল্লী ওয়া নাছজুদু ওয়া ইলাইকা নাসআ, ওয়া নহফিদু ওয়া নারজু রহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাকা ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক"।

৪. হাতিমের পর থেকে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত যে সকল দোয়া পড়া ভাল:

ক. পিতা—মাতার জন্য দোয়া।' রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী ছগীরা'

খ. ছেলেমেয়েদের জন্য দোয়া:— 'রাব্বিয আলনী মুকী মাছসলাতি ওয়ামিন জুররিয়্যাতী রাব্বানা ওয়াতাকাব্বালদোয়া"।

গ. সকল মুমিন মুসলমানের জন্য দোয়া।' রাব্বিগফিরলী ওয়া লিওয়ালি দাইয়্যা ওয়ালিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব'

ঘ. নিজের জন্য দোয়া। 'রাব্বানা লা তুজিগ কুলুবানা বা'দা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিনলাদুনকা রাহমাহ ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্যাব'।

ঙ. রাসুল গনের জন্য দোয়া।

* সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া ছালামুন আলাল মুরছালীন, ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন'।

চ. দুরুদ শরীফ পড়তে পারেন।

অথবা যে কোন দোয়া আপনার মুখস্ত আছে পড়ুন, কিংবা আরবী জানা না থাকলে বাংলায় ভক্তি ও বিনয়তার সাথে আপনার মনের আকুতি মহান প্রতিপালকের দরবারে পেশ করুন।

রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত দোয়া:— রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার, ওয়া আদখিলনাল জান্নাতা মা'আল আবরার ইয়া আজিজু ইয়া গাফ্ফার ইয়া রাব্বাল আলামীন।'

৫. ১ম চক্কর সমাপ্ত: হাজরে আসওয়াদের নিকট এলে ১ম চক্কর শেষ হলো। পুনরায় পূর্বের নিয়মে হাত তুলে তাকবীর দিন, হাতে চুমু দিয়ে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন।

৬. হামদ—সানা, দরুদ ও অন্যান্য দোয়ার মাধ্যমে ৭ বার তাওয়াফ করুন।

৭. তাওয়াফ শেষে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন অথবা ইশারায় ইসতেলাম করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দুই রাকাত সালাতুত তাওয়াফ ওয়াজিব নামাজ আদায় করে জমজমের পানি পান করুন।

জমজম পানি পান করার দোয়াঃ— আল্লাহুম্মা ইন্নী আছ আলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়া রিজকান ওয়াছিআ, ওয়া শিফাআম মিন কুল্লি দা ইন।

৮. সাফা—মারওয়ার সায়ী: জমজমের পানি পান করে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে সাফা পাহারের উদ্দেশ্যে মতাফ থেকে বের হয়ে আসুন।

১. সায়ীর দোয়াঃ— সাফার নিকটে পৌছে এ দোয়া পাঠ করুন। আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী, ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন সাআ'ইরিল্লাহ ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ি'তামারা ফালা জুনাহা আলাইহে আই ইয়াত্তাওয়াফা বিহিমা, ওয়া মান তাতাওয়া খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলীম।

সাফা পাহাড়ে উঠে কেবলা মুখি হয়ে উভয় হাতকে কাঁধ পর্যন্ত তুলে মাছনুন দোয়া গুলো পড়ুন। দীর্ঘক্ষন দোয়া করার কথাও বলা আছে।

অতপর সাফা হতে প্রশান্ত চিত্তে নেমে মারওয়ার দিকে অগ্রসর হন, হামদ সানা, কালেমায়ে শাহাদাত, দুরুদে ইব্রাহীম পড়ুন।

১০. সবুজ বাতিদ্বয়ের মাঝে দোয়াঃ— বাতিদ্বয়ের মাঝের স্থানে দৌড়িয়ে চলুন, দোয়া পড়তে থাকুন রাব্বিগ ফিরলী ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আয়াজুল আকরাম"। (মহিলাগন দৌড়াবেন না)

এর পর অন্যান্য দোয়া যেগুলো আপনার জানা আছে পড়ুন, কোরআন শরীফ পড়তে পারেন। অথবা যিকির করুন, কিংবা তাসবীহ পাঠ করতে থাকুন।

১১. সায়ীর দোয়া: সায়ীতে এ দোয়া পড়া যায় "সুবহানাল্লাহে ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়াল্লিাহিল হামদ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম"।

১২. মারওয়াতে এসে দোয়াঃ "ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন সাআ'ইরি— ল্লাহ ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ি'তামারা ফালা জুনাহা আলাইহে আই ইয়াত্তাওয়— াফা বিহিমা, ওয়া মান তাতাওয়া খাইরান ফাইন্নাল্লাহা শাকিরুন আলীম" দোয়া পড়ে মারওয়াতে উঠে পুনরায় দোয়া করুন। ১ চক্কর সায়ী সম্পন্ন হলো। এরপর পুনরায় সাফার দিকে চলুন, হামদ—সানা, দরুদ, মাছনুন দোয়ার মাধ্যমে সাত সায়ী সম্পন্ন করুন। সাত চক্কর শেষে দোয়া করে সায়ী শেষ করুন।

উল্লেখ্য, সায়ীতে কোন নিদ্দিষ্ট দোয়া নেই কোরআন ও হাদীসের বর্নিত যে কোন দোয়া পড়তে পারেন।

আল্লাহ আমাদের তাওয়াফ সায়ী কবুল করুন। আমীন ।।

১. মনকে খালেস করুন। এ সফর আপনার বিদায়ী সফরও হতে পারে, তাই সকলের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিন।

২. ফ্লাইট এর সময় সূচী ভাল ভাবে দেখে নিন। অলসতা করবেন না। কোন কারনে ফ্লাইট মিস হয়ে গেলে কঠিন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়, তাই প্রয়োজনে আশকোনা হাজীক্যাম্পে ১০ ঘন্টা আগে চলে আসুন।

৩. পাসপোর্ট, টিকেট, বোর্ডিং পাস, মুল্যবান কাগজ পত্র ও টাকা পয়সা আপনার কোমরের বেল্টে অথবা আপনার হ্যান্ড ব্যাগে রাখুন। কোন অবস্থাতেই এগুলো লাগেজে দিবেন না।

৪. আসার টিকেট ও আসার বোডিং পাস, পাসপোর্ট ও যাওয়ার বডিং পাসের সাথে না রেখে অবশ্যই আলাদা করে আপনার হ্যান্ড ব্যাগে সংরক্ষন করুন।

৫. ২ থেকে ৩ দিনের চলার মত ঔষধ আপনার হাত ব্যাগে রাখুন। দুই—এক সেট কাপড় আপনারহ্যান্ড ব্যাগেরাখুন, কারন—আল্লাহ না করুক— কোন কারনে যদি এয়ারপোর্টে আপনার লাগেজ হারিয়ে যায় বা পাইতে বিলম্ভ হয় তবে তা উপকারে আসবে। এ বৎসর লাগেজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক বিড়ম্ভনা হচ্ছে, বিষয়টি এয়ারলইন্স ও সৌদি কর্তৃপক্ষের পার্ট, কোন ভাবেই এজেন্সিকে দায়ী করা যাবে না।

৬. আশকোনা হাজী ক্যাম্পে আপনার লাগেজ বুকিং ও বাংলাদেশের ইমেগ্রেশন হবে এবং জেদ্দা এয়ারপোর্টের ইমেগ্রেশন আমাদের বিমানবন্দরে হবে, ইনশাআ— ল্লাহ।

৭. দুইটি দেশের ইমিগ্রেশন একসাথে হওয়ার কারনে আমাদের হজ্জ অফিস থেকে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা আগে হাজী সাহেবগণকে আশকোনা হাজীক্যাম্পে উপস্থিত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

৮. আপনার লাগেজ বুকিং নেয়ার পর আপনার লাগেজ হোটেলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ পৌঁছে দিবেন, ইনশাআল্লাহ।

৯. এবার আপনাকে বাসে উঠানোর জন্য লাইনে দাড় করানো হবে, আপনি লাইনে দাড়িয়ে যান। এ ক্ষেত্রে আপনার কিছুটা কষ্ট স্বীকার করতে হতে পারে। লাইনে আপনাকে ১০—১৫ বারও গণনা করতে পারে, ধৈর্য্যের সাথে লাইনে থাকুন। এই সময় বেশী করে তাসবীহ তাহলীল ও তালবিয়া পাঠ করুন।

১০. মোয়াল্লিমের লোকেরা এখানেই আপনার পাসপোর্ট নিয়ে যাবে, এবং আপনাকে বাসে করে আপনার হোটেলে পৌছিয়ে দিবে। ইনশাআল্লাহ।

১. হজ্জযাত্রীদের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়ে হজ্জযাত্রী পরিবহনের বাসের গতিবেগ কম থাকে, বেশী গতিবেগে চালানো সম্পূর্নরুপে নিষেধ। সুতরাং ধৈর্য্য ও সহনশী— লতার পরিচয় দিতে হবে।

২. হজ্জ যাত্রী বেশী পরিবহনের জন্য প্রতিটি বাসের সীট কিছুটা চাপানো থাকে। সুতরাং এ ব্যপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, বাসগুলো শুধু হজ্জযাত্রী পরিবহনের জন্যই তৈরী করা হয়েছে।

কোরবানী নিজে করা (উত্তম)।

ব্যাংকে জমা দেওয়া, আমাদের হানাফী মাজহাব মতে ব্যাংকে জমা দিলে তারতীব (ওয়াজিব) রক্ষা হয় না। মাজহাবী তারতম্যে কেউ যদি দিতে চান দিতে পারেন।

কাফেলার পক্ষ থেকে কোরবানীর ব্যাপারে আপনাকে সহযোগীতা করা হবে।

জামায়াতে পাথর মারতে গিয়ে জামারাতকে শয়তান বলে গালি দেওয়া, চোখ—মুখ খিটমিট করা, জুতা নিক্ষেপ করা, অপর জনকে কষ্ট দেওয়া, বড় সাইজের পাথর নিক্ষেপ করা, একত্রে ৭ টি মেরে দেওয়া নাজায়েয।

 

১১ই জ্বিলহজ্জ:

 

১. কোরবানী, হলক্ব, তাওয়াফ, সায়ী, কোন কারনে অনাদায় থেকে গেলে আদায় করে ফেলা।

২. সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলার পর থেকে পর দিন ফজর পর্যন্ত যে কোন সময়ে যথাক্রমে ছোট, মেজ, বড় জামারাতে ৭ টি করে মোট ২১ টি কংকর নিক্ষেপ করা।

৩. ছোট ও মেজ জামারাতে কংকর মেরে দোয়া করা। বড় জামারাতে পাথর মেরে দোয়া না করে স্থান ত্যাগ করা।

৪. মিনাতে অবস্থান ও ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা।

১২ই জ্বিলহজ্জ (মিনা থেকে বিদায়ের দিন)

১. ওজর বশতঃ কারো তাওয়াফ, সায়ী বাকী থাকলে আসরের পূর্বে তা করে ফেলা।

২. সূর্য চলার পর থেকে ফজর পর্যন্ত যে কোন সময় আগের দিনের ন্যায় কংকর মারা।

৩. ছোট ও মেজ জামারাতে কংকর মেরে দোয়া করা। বড় জামারাতে পাথর মেরে দোয়া না করে স্থান ত্যাগ করা।

৪. মক্কা শরীফের হোটেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত হজ্জের বাড়ীতে অবস্থান করা।

৫. নির্ধারিত তারিখে মক্কা শরীফ এসে হোটেলে অবস্থান, নফল তাওয়াফ এবাদাত বান্দেগীতে সময় অতিবাহিত করুন। মদীনা শরীফ যাওয়ার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব) সম্পাদন করুন। ভারাক্রান্ত মনে মক্কা শরীফ হতে বিদায় নিন। এই তাওয়াফে এহরাম লাগবেনা।

বি. দ্র. বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করার পরও হেরেম শরীফে আসা যাবে, ইবাদত বন্দেগী এবং নফল তাওয়াফ—ও করা যাবে।

হজ্জের ফরয: (৩টি)

 

১. ইহরাম ধারণ করা।

২. আরাফায় উকুফ করা।

৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা। (উকুফের পর করতে হয়।)

 

হজ্জের ওয়াজিব: (৬টি)

 

১. মুযদালিফায় উকুফ করা।

২. জামারাতে পাথর মারা।

৩. তামাতু ও কিরানকারীদের জন্য কুরবানি করা।

৪. কসর বা হলক করা।

৫. সাফা—মারওয়ার সায়ী করা।

৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা।

 

হজ্জের সুন্নাত:

 

১. বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করা।

২. তাওয়াফে কুদুম করা।

৩. মিনায় অবস্থান করা।

৪. ইফরাদকারীর জন্য কুরবানী করা।

১. হজ্জ শেষে ব্যস্ততার দিনগুলির মধ্যে আমরা মদীনা পাকে রওয়ানা হচ্ছি, কিছু সমস্যা হতে পারে— যেমন, সঠিক সময়ে বাস না পাওয়া। বলা হল, 'বাস সকালে আসবে' দেখা গেল সেই বাস দুপুর, বিকাল গড়িয়ে রাতে আসলো—এ ক্ষেত্রে কাফে— লার কিছুই করার থাকেনা। তাই এ ব্যপারে কাউকে কোনপ্রকার দোষারোপ না করে সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

২. মোয়াল্লিম কতৃর্ক প্রদত্ত বাসে করেই আমাদের মদীনা শরীফ যেতে হবে।

৩. পথিমধ্যে খাওয়া—দাওয়ার দায়িত্ব হাজী সাহেবের নিজের ব্যবস্থায় থাকবে।

মদীনা শরীফে অবস্থান ও নবীজির দরবারে সালাম পেশ

১. মদীনা শরীফ পৌছে সর্বপ্রথম যার যার রুমে উঠে ওজু গোসল সেরে নিন ও বিশ্রাম করে নিন।

২. সুবিধাজনক সময়ে পুরুষেরা একত্রিত হয়ে নবীজির দরবারে সালাম পেশ করবো।

৩. মহিলাগণ মহিলাদের সময় অনুযায়ী নিজেরা সালাম পেশ করতে যাবেন।

৪. মসজিদে নববীতে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করুন।

৫. কাফেলা কতৃক সময় অনুযায়ী দিনে মদীনা শরীফের আশে—পাশে জেয়ারত করুন।

ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা

২. সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এর লাগেজ ওয়েট ৪৬ কেজি ২৩কেজি+২৩কেজি (২টি ব্যাগ) ১টি ২৮ কেজি ও অন্যটি ১৮কেজি এরুপও যেন না হয় সুতরাং এর বেশী ওয়েটের দায়ভার হাজি সাহেব নিজে বহন করবেন।

৩. মোয়াল্লিম কতৃক প্রদত্ত বাসে করে আমাদের মদীনা শরীফ থেকে জেদ্দা পৌঁছতে হবে।

৪. সফরের সময়ের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব হাজি সাহেব নিজ জিম্মাদারিতে করবেন।

৫. অনেক সময় দেখা যায় ফ্লাইট সিডিউল ডিলে হয়, এর যাবতীয় দায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের। সুতরাং কাফেলাকে দোষারোপ না করে ধৈর্যধারণ করতে হবে।

৬. আল্লাহ না করুক! কোন কারনে যদি কোন হাজীর মালামাল হারিয়ে যায়, অথবা ঢাকা এয়ারপোর্টে মাল এসে না পৌঁছে সে ক্ষেত্রে এয়ারলইন্স কর্তৃপক্ষের উপর এর দায়ভার বর্তায়; সুতরাং কাফেলাকে দায়ী করা যাবে না।

ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে পবিত্র হজ্জের যাবতীয় কার্যাবলী যথাযথভাবে সম্পাদন করে মহান আল্লাহর রহমতে পুনরায় প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।

হজ্জ ভিসা, ফ্লাইট টিকেট (যাওয়া—আসা), সীট কনফার্ম ইত্যাদি কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা।

এয়ারপোর্ট থেকে মুয়াল্লিমের বাসে করে মুয়াল্লিমের অফিস হয়ে হোটেলে পৌছানো। পাসপোর্টের পরিবর্তে মুয়াল্লিমের অফিস থেকে আইডি কার্ড সংগ্রহ করে দেওয়া। মক্কা শরীফে অবস্থান কালীন সময়ে খাওয়া—দাওয়ার ব্যবস্থা করা। হজ্জের আগে অথবা পরে মিনা, আরাফা, মোজদালেফা সহ দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখানো।

হোটেল থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফা, আরাফা থেকে মোজদালেফায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা। (মোজদালেফা থেকে মিনা ও মক্কাফেরার সময় প্রচন্ড ভীড় হয়, যাতায়াতের জন্য ট্রান্সপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই এ সময়ে নিজেদের ব্যবস্থায় চলাচল করতে হবে)।

রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর দরবার মদীনা শরীফে হোটেলে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা। ওহুদ, মসজিদে কোবা, মসজিদে কেবলাতাইন, খন্দক সহ দর্শনীয় স্থান— সমূহ জেয়ারত করানো। মদীনার মুয়াল্লিমের অফিস থেকে যথাসময়ে কাগজ পত্র সংগ্রহ করে ফিরতি সফরের ব্যবস্থা করা।

হাজী সাহেব/সাহেবাগণ যাতে নির্ভুলভাবে হজ্জের যাবতীয আহকাম (নিয়ম) সুচারুভাবে আদায় করতে পারেন; তার জন্য হজ্জের সফরে প্রত্যেক দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। হজ্জের প্রশিক্ষণ দিবেন বহু বৎসর হজ্জের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হজ্জ কাফেলার পরিচালক বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন পূর্ব রাজা বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও

খতীব আলহাজ্জ হযরত মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং হজ্জের সফরে তিনি সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উত্তম হজ্জ আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।

সম্মানিত হজ্জযাত্রি গনের সাথে হজ্জের সফরে যেসব মালামাল থাকা প্রয়োজন

১. ইহরামের কাপড় ২ সেট (লুঙ্গী আড়াই গজ ও চাদর ৩ গজ করে। সুবিধার জন্য লুঙ্গী ৩ গজও হতে পারে।

২. জামা ও পায়জামা সুবিধামত।

৩. লুঙ্গী ২টি।

৮. গায়ের চাদর ১ টি

৫. গেঞ্জী ২—৩ টি

৬. সিঙ্গেল বিছানার চাদর ১ টি

৭. স্পন্জ ২ জোড়া।

৮. টুপি ২ টি।

৯. ১ টি ট্রাভেল ব্যাগ/লাগেজ।

১০. ১টি কোমরের ভাল বেল্ট।

১১. মেসওয়াক, ব্রাস, পেস্ট ইত্যাদি।

১২. ২ টি বড় গামছা। ২০

১৩. প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র।

১৪. একটি মেলামাইনের প্লেট ও মগ।

১৫. সুকনা কিছু খাবার সাথে রাখলে ভাল।

১৬. তায়ম্মুমের জন্য একটি মাটির চাকা।

বিঃ দ্রঃ—মহিলা হাজীসাহেবা গনের আলাদা কোন এহরামের কাপড় নেই, স্বাভাবিক পোষাকেই তারা এহরামের নিয়ত করবেন।

বিঃ দ্রঃ— একজন সম্মানিত হজ্জযাত্রীর আসবাবপত্রের পরিমান এমন হওয়া উচিৎ যা নিজে বহন করতে পারে।

১. সার্বক্ষনিক সাথে রাখার জন্য একটি ছোট ব্যাগ, যা কাফেলার পরিচয় বহন করবে।

২. হারাম শরীফের মধ্যে জুতা রাখার জন্য একটি থলে।

৩. মিনা, আরাফায় হজ্জের সফরের জন্য একটি পিঠে বহনের ব্যাগ।

৪. একটি ছোট ছাতা

৫. তাওয়াফ ও সায়ী গননার জন্য ৭ দানার একটি তাছবীহ।

৬. ছবি সহ পরিচয় পত্র।

৭. সহজ পদ্ধতিতে হজ্জের কিতাব।

৮. ব্যাগ সমূহের ট্যাগ।

পাঁচ দিনের হজ্জের সফরে যা নিতে হবে

১. কাপড় বহনের ব্যাগ (কাফেলা থেকে সরবরাহকৃত)।

২. এহরামের কাপড় ২ সেট।

৩. একটি প্লাষ্টিকের পাটি (মক্কা থেকে নিবেন)।

৮. একটি ছোট ছাতা (কাফেলা থেকে সরবরাহকৃত)।

৫. সিঙ্গেল একটি বেড সীট।

৬. টিস্যু পেপার সহ অন্যান্য ব্যবহৃত সামগ্রী।

৭. ওয়াজিফার কিতাব।

৮. পাথর রাখার পাত্র (জুস বা পানির ছোট একটি খালি বোতল সংগ্রহে রাখবেন)

৯. শুকনা কিছু খাবার।

১০. প্রয়োজনীয় ঔষধ।

ট্রাভেল ও হজ্জ এজেন্ট লাইসেন্স নং-০৮৪

যোগাযোগ

© 2024 linkerstravelsltd  All Right Reserved.  | Developed by Rumon